শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে শাহবাগ থানা অবরোধ করেছে প্রতিবাদকারীরা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা এই হত্যাকাণ্ডের 'প্রকৃত' আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার একটি কঠোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে, শিক্ষার্থীরা প্রথমে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হয়, যেখানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রতিবাদ শুরু করে। এরপর, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে, তারা শাহবাগ থানার দিকে অগ্রসর হয়ে থানাটি ঘেরাও করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তারা থানার সামনে অবস্থান করে, তাদের দাবি আদায়ের জন্য সোচ্চার থাকে।
 'বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ' ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়, যা তাদের ঐক্যবদ্ধ সংকল্পকে তুলে ধরে। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল শাহরিয়ার হত্যার সঙ্গে জড়িত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ একটি স্থান হিসেবে গড়ে তোলা। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়, যাতে ভবিষ্যতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর না ঘটে।


শাহরিয়ার আলমের সহপাঠী এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মশিউর রহমান শুভ দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন যে, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তবে তারা আগামী রবিবার আরও বৃহত্তর প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। শিক্ষার্থীরা প্রথমে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে একত্রিত হন, যেখানে শাহরিয়ার অধ্যয়ন করতেন। এরপর, রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন। প্রতিবাদ চলাকালীন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যার মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষোভ ও ন্যায়বিচারের দাবি তুলে ধরেন। তাদের স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল, "আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?", "খুনি কেন বাইরে, প্রশাসন কী করে?", এবং "আমার ভাই মরল কেন, শাহবাগ থানা জবাব চাই"।

শাহরিয়ারের আরেক সহপাঠী তৌফিক-উল ইসলাম স্পষ্টভাবে বলেন, পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তারা হয়তো ঘটনায় জড়িত, কিন্তু তারা প্রধান অপরাধী নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এবং এর জবাবদিহি দাবি করেন। তৌফিক সতর্ক করে বলেন, যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তবে তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভিন্ন রূপ নেবে।

শাহবাগ থানায় অবস্থানরত শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুন্সী জোর দিয়ে বলেন, তাদের এই প্রতিবাদ একটি নির্দলীয় উদ্যোগ। তিনি অভিযোগ করেন, শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তার লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে, তাদের মূল লক্ষ্য বিভিন্ন ব্যক্তির পদত্যাগ দাবি করা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি হল শাহরিয়ার হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা।



শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও, যিনি তাঁকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন, সেই মূল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইব্রাহিম মুন্সী। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, তাঁরা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর হামলা কিংবা কারও পদত্যাগ দাবি করতে আসেননি। তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য হলো প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা এবং তার বিচার নিশ্চিত করা।

প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের একটি দল আলোচনার জন্য শাহবাগ থানায় যান। এই প্রতিনিধি দলে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মু. আবদুস সালাম, অসীম দাস, মু. সিরাজুল ইসলাম এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আলোচনার পর, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানা এলাকা ত্যাগ করে ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে যান।